আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার কন্যাসন্তান

কন্যাসন্তান: আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার

কন্যাসন্তান আল্লাহ তাআলার অমূল্য নেয়ামত। তারা মা-বাবার জন্য জান্নাতের দাওয়াতনামা নিয়ে এই পৃথিবীতে আসে। পবিত্র কোরআনে কন্যাসন্তানের সংবাদকে সুসংবাদ বলা হয়েছে। ইসলামে সন্তান-সন্ততির মধ্যে কোনো বৈষম্য রাখা হয়নি; বরং ছেলে-মেয়ে উভয়কেই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

কন্যাসন্তানের মর্যাদা ও গুরুত্ব
কন্যাসন্তানের মাধ্যমে পরিবারে আল্লাহ বরকত ও সুখ দান করেন। হাদিসে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। নবী করিম (সা.) কন্যাসন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন এবং অন্যদেরও এ বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন।

কন্যাসন্তানের প্রতি সমাজের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি
অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমাদের সমাজের কিছু অংশে এখনো কন্যাসন্তানকে নেতিবাচক চোখে দেখা হয়। কন্যাসন্তান জন্ম নিলে অনেক ক্ষেত্রে মায়ের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের আচরণ ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের কুপ্রথার অংশ, যা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিন্দিত।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:

> “যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ অন্ধকার হয়ে যায় এবং সে অসহ্য মনস্তাপে ভুগতে থাকে। সে চিন্তা করে, অপমান সহ্য করে তাকে জীবিত রাখবে নাকি মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের এ ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।” (সুরা আন-নাহল: ৫৮-৫৯)

 

রাসুল (সা.)-এর দৃষ্টিতে কন্যাসন্তানের মর্যাদা

1. কন্যাসন্তানের লালন-পালনে জান্নাতের সুসংবাদ

নবী করিম (সা.) বলেন,
“যে ব্যক্তি দুটি কন্যাকে তারা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দুটি আঙুলের মতো পাশাপাশি থাকব।” (মুসলিম: ২৬৩১)

 

2. কন্যাসন্তানের প্রতি ন্যায়বিচার

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেন,
“যার ঘরে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলো এবং সে তাকে কষ্ট দেয়নি, অসন্তুষ্ট হয়নি এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য দেয়নি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (মুসনাদ আহমদ: ১২২৩)

 

3. কন্যাসন্তানকে বরকতময় বলে ঘোষণা

রাসুল (সা.) বলেন,
“ওই নারী বরকতময়ী ও সৌভাগ্যবান, যার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়।” (কানযুল উম্মাল: ১৬৬১১)

 

হাদিসে কন্যাসন্তানের গুরুত্ব

1. আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত,
“যে ব্যক্তি কন্যাসন্তানদের প্রতি সদাচার করে, তারা তার জন্য জাহান্নাম থেকে রক্ষাকবচ হবে।” (মুসলিম: ৬৮৬২)

2. আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত,
“যার তিনটি মেয়ে বা বোন থাকবে এবং সে তাদের সঙ্গে সদাচার করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (আদাবুল মুফরাদ: ৭৯)

3. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
“যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সে তাদের কষ্টে ধৈর্য ধরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (বাইহাকি: ৮৩১১)

 

ভাই ও পরিবারের দায়িত্ব
কন্যাসন্তানের প্রতিপালনে শুধু মা-বাবা নয়, পরিবারের ভাইদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের প্রতি সদাচরণ করা এবং তাদের শিক্ষা ও উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করা ভাইয়েরও কর্তব্য।

কন্যাসন্তান আল্লাহর নেয়ামত। তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে বিশাল পুরস্কার রয়েছে। পক্ষান্তরে তাদের অবহেলা বা প্রতি অবিচার করলে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
আল্লাহ আমাদের কন্যাসন্তানদের যথাযথভাবে লালন-পালনের তাওফিক দান করুন।

 

শেয়ার করুন

Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *