
খুলনায় সন্ত্রাসীদের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত
খুলনায় পলাতক ও জেলে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসায় খুন ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে অহরহ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকায় নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব সন্ত্রাসী। মাদক বিকিকিনির অর্থ ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটছে নানা অপরাধ।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, খুলনার আন্ডারওয়ার্ল্ড পরিচালিত হয় তিন বাহিনীকে কেন্দ্র করে। এগুলো হলো-আশিক, নুর আজিম ও গ্রেনেড বাবু বাহিনী। খুলনা শহরকে তিন ভাগ করে তারা আধিপত্য বজায় রেখেছে। খুলনা সদর ও লবণচরা থানা এলাকার আশিক, সোনাডাঙ্গা-খালিশপুরে নুর আজিম ও রায়ের মহল দৌলতপুরে গ্রেনেড বাবুর নিয়ন্ত্রণ। একজনের এলাকায় অন্য বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ বা মাদক কেনাবেচা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলেই ঘটছে গোলাগুলির মতো ঘটনা।
জানা যায়, বুধবার রাতে নগরীর হাজি মুহসীন রোডে মো. সোহেল নামে এক রংমিস্ত্রী খুন হন। এ হত্যার পেছনে মাদক কেনাবেচার সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আশিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। এর জেরেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর রাতে নগরীর নিরালা এলাকায় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে এসে একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে পথচারী ইউনুস শেখ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর সন্ত্রাসীরা চাঁনমারি এলাকায় গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ওই এলাকার আব্দুল আহাদ হাওলাদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করে। ১২ ডিসেম্বর শহরের জিরোপয়েন্ট এলাকায় রেজা শেখ নামে এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। দেহ থেকে তার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিংড়ি পলাশ নামের এক সন্ত্রাসী কিছু দিন আগে জেল থেকে জামিনে বেরিয়েছে। এ ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নগরীর টুটপাড়ায় ২৯ নভেম্বর রাতে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আশিক বাহিনীর প্রধান আশিক, তার ভাই সজীবসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই মো. আবদুল্লাহ। কিন্তু তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
নগরীর বসুপাড়া এলাকায় ৫ নভেম্বর রাতে অস্ত্রধারীরা রফিকুল ইসলাম মুক্তা নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। ২৮ অক্টোবর দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নগরীর দৌলতপুর থানার কালীবাড়ি বাজারের দত্ত জুয়েলার্সে ডাকাতি করে। তারা জুয়েলার্স থেকে স্বর্ণালংকার ও নগদ ২ লাখ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি ও বোমা ফাটিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও ভাইরাল হয়।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, নগরীতে আগের মতো পুলিশের টহল ও অভিযান দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরেছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এ অবস্থায় পুলিশ ভূমিকা না নিলে খুনোখুনি আরও বাড়বে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, পুলিশ এসব অপরাধমূলক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অধিকাংশ ঘটনায় মাদকসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।


Leave a Reply