
রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে একটি আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করা মো. ইউসুফ সম্প্রতি জমানো টাকা এবং ৫ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে পার্টসের দোকান চালু করেছিলেন। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মধ্যেই সেই স্বপ্নভরা দোকানটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের বিবরণ:
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৮টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের গাড়ির গ্যারেজে আগুন লাগার খবর পায়। তিনটি ইউনিটের প্রচেষ্টায় সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে ততক্ষণে গ্যারেজে রাখা ছয়টি যানবাহন এবং গ্যারেজ সংলগ্ন ১২টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউসুফ মোটরস পার্টস:
এই ১২টি দোকানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ইউসুফ মোটরস পার্টসের মালিক মো. ইউসুফ। তার দোকানের প্রায় ১২ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, “অনেক আশা নিয়ে দোকানটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু সব পুড়ে গেল। ৫ লাখ টাকার ঋণ আর মালামালের বাকি টাকা কীভাবে শোধ করব, সেটা এখন বড় চিন্তা।”
অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী:
ব্যাটারি ব্যবসায়ী সিদ্দিকের দোকানে থাকা অর্ধশতাধিক ব্যাটারি, বিক্রির সরঞ্জাম, এবং মেরামতের যন্ত্রপাতি সব পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, “আগুনের পর কিছুই বাকি নেই। সব ছাই হয়ে গেছে। এখন জরিমানা দেব নাকি ঋণ শোধ করব, সেটাই বুঝতে পারছি না।”
চা দোকানি জামাল হোসেন মাত্র দুদিন আগে নতুন করে দোকান শুরু করেছিলেন। তিনি জানান, “শুক্রবার দোকান চালু করেছি, আর রোববার আগুনে সব শেষ। এখন কী করব, কী খাব, বুঝতে পারছি না।”
সম্ভাব্য কারণ ও সমস্যা:
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারি জায়গায় ভোগ-দখল ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া, পেছনে মাদক ও জুয়ার আসর থেকে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই ট্রাকস্ট্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা বহুবার পরিকল্পিত ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানে বহুতল গ্যারেজ এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে এমন দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।”
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পূরণে সরকারি সহযোগিতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।