১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামের সন্ধানে পারস্য থেকে মদিনায় এসেছিলেন যে সাহাবি

শেয়ার করুন

সালমান ফারসী রা.-এর জীবনকথা

হজরত সালমান ফারসী রা.-এর জন্ম পারস্যে। তার মা-বাবা ছিলেন অগ্নিপূজারী। তার বাবা ছিলেন গোত্রপ্রধান এবং তাকে অগ্নিপূজার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। বাবা তাকে সাধারণত বাড়িতেই আটকে রাখতেন এবং বাইরে যেতে দিতেন না।

খ্রিস্টধর্মের প্রতি আকর্ষণ

একদিন জমি দেখাশোনার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি পান তিনি। পথে খ্রিস্টানদের একটি গির্জা দেখে তাদের ইবাদত পদ্ধতি তার ভালো লাগে। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন, এই ধর্মের মূল কেন্দ্র শামে। বিষয়টি জানার পর দিনভর গির্জায় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে বাবাকে সব জানান। তার বাবা তাকে এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হতে নিষেধ করেন এবং বলেন যে তাদের পূর্বপুরুষের ধর্মই শ্রেষ্ঠ। তবে সালমান ফারসী রা. দৃঢ়ভাবে জানান, এই নতুন ধর্মই উত্তম।

মুক্তির জন্য সংগ্রাম

ধর্ম পরিবর্তনের আশঙ্কায় বাবা তাকে লোহার শিকল দিয়ে বন্দি করে রাখেন। এরপর তিনি গোপনে গির্জায় বার্তা পাঠান, শামের কোনো কাফেলা এলে যেন তাকে খবর দেওয়া হয়। সুযোগ বুঝে তিনি এক কাফেলার সঙ্গে শামে চলে যান। সেখানে এক গির্জার প্রধান পুরোহিতের সঙ্গে থাকেন।

পুরোহিতদের সঙ্গে সময়

পুরোহিত অসৎ হওয়ায় সালমান ফারসী রা. তার আসল চেহারা প্রকাশ করেন। পরে অন্য এক সৎ পুরোহিতের কাছে আশ্রয় নেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন সৎ পুরোহিতের সান্নিধ্যে থেকে শাম, মওসুল, নাসসীবিন এবং আম্মুরিয়া ভ্রমণ করেন। আম্মুরিয়ার পুরোহিত তার কাছে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে আরবে এক নবীর আগমন ঘটবে। সেই নবীর নির্দশন হবে— তিনি সদকা খাবেন না, হাদিয়া গ্রহণ করবেন এবং তার কাঁধের মাঝখানে নবুয়তের মোহর থাকবে।

দাসত্ব ও মদিনায় আগমন

পুরোহিতের মৃত্যুর পর এক আরব কাফেলার সঙ্গে যাত্রা করেন সালমান ফারসী রা., কিন্তু তাদের বিশ্বাসঘাতকতায় দাস হিসেবে বিক্রি হন। পরে এক ইহুদির চাচাতো ভাই তাকে মদিনায় নিয়ে আসে। মদিনায় তিনি আম্মুরিয়ার পুরোহিতের বর্ণিত শহর চিনতে পারেন। কিছুদিন পর রাসূল সা. মদিনায় হিজরত করেন।

নবুয়তের প্রমাণ

একদিন তিনি রাসূল সা.-এর কাছে সদকার খেজুর নিয়ে যান। রাসূল সা. তা সাহাবিদের দেন, কিন্তু নিজে খান না। পরবর্তী সময়ে হাদিয়া হিসেবে খেজুর দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন। শেষতক রাসূল সা.-এর নবুয়তের মোহর দেখে তিনি তার নবুয়ত সম্পর্কে নিশ্চিত হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন।

খন্দকের যুদ্ধে অবদান

সালমান ফারসী রা. দাসত্বের কারণে বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশ নিতে না পারলেও খন্দকের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার পরামর্শেই শত্রুদের আক্রমণ ঠেকাতে গর্ত খনন করা হয়। রাসূল সা. তাকে ভালোবাসতেন এবং নিজের পরিবারের একজন বলে উল্লেখ করতেন।

সালমান ফারসী রা.-এর জীবন আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা, যেখানে সত্যের সন্ধানে দৃঢ়তা ও ত্যাগের মহত্ত্ব ফুটে ওঠে।

 

শেয়ার করুন