
লুৎফুজ্জামান বাবরের ১৭ বছরের বন্দিজীবনের অবসান: সব মামলায় খালাস
লুৎফুজ্জামান বাবর, যিনি বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর সাত মাস কারাভোগের পর সবশেষ মামলায় আজ (মঙ্গলবার) হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন। এই রায়ের পর আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী। সমর্থকেরা এ সময় উল্লাসে মিছিল করেন। তবে গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বাবরের স্ত্রী ও ছেলে।
আইনজীবীর বক্তব্য
বাবরের পক্ষে শুনানি পরিচালনাকারী আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, বাবরকে ৭৮ দিন রিমান্ডে রেখে রাষ্ট্রপক্ষ চাপ প্রয়োগ করেছিল, যাতে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলায় জড়িয়ে জবানবন্দি দেন। তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, জবানবন্দি দিলে তাকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হবে। তবে বাবর রাজি না হওয়ায় তাকে আসামি করা হয়।
মুক্তির নির্দেশ
আজকের রায়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালাসের আদেশ দিয়েছেন। শিশির মনির জানান, আদালত আজকেই মুক্তির নির্দেশ জারি করবেন এবং সেটি দ্রুত কারাগারে পৌঁছানোর পর বাবরকে মুক্তি দেওয়া হবে।
মামলার প্রেক্ষাপট
লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বেশ কিছু মামলা ছিল। ২০০৭ সালের ২৮ মে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন এবং অন্যান্য দণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে একের পর এক মামলায় তিনি খালাস পান। গত ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় থেকে খালাস পান। এর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়ও তিনি খালাস পেয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করা বাবর ১৯৯১ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আজকের রায়ের মাধ্যমে লুৎফুজ্জামান বাবরের ১৭ বছরের বন্দিজীবনের অবসান ঘটলো। তার আইনজীবীরা আশাবাদী, মুক্তির পর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন।


Leave a Reply