হাসিনার গোপন কারাগারে আটক থাকত শিশুরাও, দেওয়া হতো না মায়ের দুধ

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এই নাটকীয় পটপরিবর্তনের পর সাবেক সরকারের অধীনে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসছে।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে গোপন কারাগারে শিশুদের আটকের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক তদন্তে উঠে এসেছে যে, শিশুরা তাদের মায়েদের সঙ্গে মাসের পর মাস আটক ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এমনকি মায়েদের সন্তানদের দুধ খাওয়ানোর অনুমতিও দেওয়া হয়নি।

গুমের তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন
গুমের ঘটনা তদন্তকারী একটি কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক কেন্দ্রে শতাধিক লোকের সঙ্গে বেশ কয়েকটি শিশুকে আটকে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তত অর্ধডজন শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আটক ছিল। গর্ভবতী নারীদেরও সন্তানসহ বন্দি রাখার নজির পাওয়া গেছে, যাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তিনি এমন একটি আটক কেন্দ্র দেখেছেন যেখানে শিশুকালে তাকে তার মায়ের সঙ্গে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তবে তার মা আর কখনো ফিরে আসেননি।

অন্য একটি ঘটনায়, এক দম্পতি ও তাদের শিশুকে আটক করা হয়। সেখানে বাবাকে মানসিকভাবে চাপ দেওয়ার জন্য শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা হয়।

শেখ হাসিনার সরকার এবং গুমের ঘটনা
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শত শত নেতা-কর্মীকে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমের অভিযোগ রয়েছে। যদিও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এসব অভিযোগ সরকার অস্বীকার করেছিল। তারা দাবি করেছিল, নিখোঁজদের অনেকেই ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পদক্ষেপ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কমিশনের সুপারিশ
কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত বাহিনীগুলোর কমান্ডারদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হবে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবার মানসিক, আর্থিক ও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

কমিশন আরও বলেছে, গুমের ঘটনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ধরনের কর্মকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং সিস্টেমেটিকভাবে পরিচালিত হয়েছে।

 

শেয়ার করুন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *