
– শনিবার রাত ১টার দিকে কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল পয়েন্টে নোঙর করা ‘সুফিয়া’ নামে এলপিজি বহনকারী একটি লাইটার জাহাজে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। মূলত মাদার ভেসেল এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস থেকে ওই জাহাজে আগুন ছড়ায়। যদিও নিকোলাসের আগুন নাবিকদের চেষ্টায় কিছুক্ষণের মধ্যে নিভিয়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে লাইটার জাহাজে লাগা আগুন নেভাতে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করে। রোববার দুপুরের দিকে এটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। গতকাল নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমানকে। কমিটিতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ অন্য সংস্থার প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
তদন্ত কমিটিকে এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস এবং বিএলপিজি সুফিয়া জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন, এলপিজি পরিবহনে জাহাজ এবং জাহাজগুলোর নাবিকদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ণয়, পরিবাহিত এলপিজির পরিবহন ও উপযুক্ততা নিরূপণ, অগ্নি-দুর্ঘটনায় হওয়া ক্ষতি ও দায় দায়িত্ব নিরূপণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, তাঞ্জানিয়ার পতাকাবাহী এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কুতুবদিয়া অ্যাংকরেজ এলাকায় এলপিজি গ্যাস খালাসের জন্য আসে। পরে সুফিয়া জাহাজ এমটি ক্যাপ্টেন নিকেলাস জাহাজ থেকে এলপিজি লাইটারিং কার্যক্রম শুরু করে। লাইটারিং চলাকালে শনিবার রাত ১টার দিকে এমটি ক্যাপ্টেন নিকোলাস জাহাজের ডেকে আগুন লেগে যায়। পরে সুফিয়ায়ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং বড় অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করে। আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সুফিয়ার সব নাবিক পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে টাগ তুফান এক্সপ্রেস ৩১ নাবিককে জীবিত উদ্ধার করে।
কুতুবদিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, সাগরে নোঙর করা জাহাজে আগুন লাগার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়। এ ছাড়া নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকেও জানানো হয়েছে। তারা দ্রুত সহযোগিতা করেন।
কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের (চট্টগ্রাম) ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল হক জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কোস্টগার্ড টাগ শিপ, তিনটি মেটাল শার্ক নিয়ে অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে।
কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকির জানান, এখনো আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
এদিকে জাহাজে আগুন লাগার পর ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নোঙর করা জাহাজটিতে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
এর আগে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ক্রুড অয়েল বহনকারী বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরপর পৃথক দুটি ঘটনায় বিএসসি নাশকতার আশঙ্কা করছিল। ১২ দিনের ব্যবধানে বন্দরে চারটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক বলে মত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করা আতিক ইউ খানের। তিনি জানান, গত ৩০ বছরে এমন কিছু দেখিনি। রোববার ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ‘বাংলার জ্যোতি’ নামে একটি তেলবাহী জাহাজে আগুনের পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনজনের মৃত্যু হয়।-


Leave a Reply